মরুভুমির সিংহ
ওমর মুখতার, আপনার সাজা প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড … ”
“আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি এবং আল্লাহর কাছে আমরা ফিরে যাব …”
.
এটা সেই সময়ের কথা যখন ওমর আল মুখতার জানতে পেরেছিল যে তাকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে।
.
তবে ওমর আল-মুখতার কে ছিলেন?
তিনি ছিলেন একজন ইসলামী পন্ডিত এবং বিপ্লবী যিনি প্রায় ২০ বছর ধরে লিবিয়ায় ইতালীয় দখলের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
.
সাধারণত ‘মরুভূমির সিংহ’ নামে খ্যাত ওমর তার যৌবনে ইসলাম অধ্যয়ন করে কাটিয়েছিলেন এবং অল্প বয়সেই হাফিজ হয়েছিলেন।
.
তিনি ১৯১১ সাল পর্যন্ত কুরআনের শিক্ষক হিসাবে বহু বছর অতিবাহিত করেছিলেন, যখন ইতালীয় সেনারা লিবিয়ায় আক্রমণ করেছিল।
.
যখন তার ৫৩ বছর বয়স, তখন সে তার জীবনে নতুন বাঁক নিতে চলেছিল। ‘রোমান রিকনকুইস্টা’ হিসাবে বর্ণিত ইতালিয়ান ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে তাঁর লোকদের রক্ষা করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন তিনি। ওমর এবং তার ছোট ছোট দলগুলি ইতালিয় আর্মিদের চৌকিগুলিতে দক্ষতার সাথে আক্রমণ করেছিল, সৈন্যদের আক্রমণ করেছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি নষ্ট করে ফেলেছিল, অত্যন্ত উন্নত ইতালীয় রয়্যাল আর্মি এবং তার সেনাবাহিনী যারা হতবাক এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।
.
এমনকি ওমরের চরিত্র ও সততা তার শত্রুদেরও মুগ্ধ করেছিল, যুদ্ধের বীভৎসতা এবং নৃশংস দখলদারিত্বের সময়ও ইসলামী নীতিগুলিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি।
.
২০ বছর যুদ্ধের পরে, ইতালীয় আক্রমণকারীদের কাছে পরাজয় ও ধাক্কা খেয়ে ওমর ৭৩ বছর বয়সে যুদ্ধে আহত হওয়ার পরে তাকে বন্দী করা হয়।
.
ইটালিয়ানরা তাকে তার লোকদের ফিরিয়ে আনার জন্য অনেকগুলি চুক্তি এবং ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সর্বদা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বিখ্যাতভাবে বলেছে:
.
“আমরা কখনই আত্মসমর্পণ করব না। আমরা জিতব না হলে আমরা মরে যাব। ”
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ সালে, ওমর আল মুখতার শহীদ হন।
.
মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার পূর্বে তার পড়া কুরআনের শেষ আয়াত ছিলো:
[ধার্মিকদের কাছে এটি বলা হবে],
"হে প্রশান্ত আত্মা!"
"তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে।"
"অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও।"
"আর প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।"
(89: 27-30)
.
আল্লাহ তায়ালা তার উপর শান্তি বর্ষিত করুন।
…
রেফারেন্স: উক্ত আর্টিকেল IlmFeed থেকে অনুবাদ করেছে মুসলমানদের স্বর্ণকনিকা পেজ
একটি শিক্ষনীয় গল্প
দক্ষিণ ভারতের কোন এক নবাবের রাজ্য যখন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন নওয়াব ছিলেন নিরুদ্বেগ। তিনি ভেবেছিলেন, শত্রু মোকাবেলা করার জন্য তো রয়েছে বেতনভুক লাঠিয়াল, বরকন্দাজ, অশ্বারোহী ও তীরন্দাজ বাহিনী। তারাই যথেষ্ট। তাদের কাজ তারাই করবে। আমি খামখা এ নিয়ে কেন মাথা ঘামাতে যাবো।
নওয়াব হাম্মানখানা থেকে এইমাত্র গোসল সেরে এসে কাপড়-চোপড় পরে আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে বসেছেন। কিছুক্ষণ পরই টেবিলে খানা লাগানো হবে। খানার সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছেন। নফর তার কক্ষে প্রবেশ করে বললো, জাহাপনা! শত্রুরা চারিদিক থেকে এগিয়ে আসছে, এখনই রাজপ্রাসাদ ঘিরে ফেলবে। যে যেদিকে পারে, পালাচ্ছে। ফটকে পালকি ও ঘোড়া আছে, আপনার যেটা পছন্দ হয় তাতে সওয়ার হয়ে পালান। একথা ক’টি বলে নফর দ্রুত নিজেই পালালো। নওয়াব তার খাস নফরকে জুতা-মোজা পরিয়ে দেয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু সে ডাকে কেউ সাড়া দিল না। নওয়াব জানতেন না যে, সেও পালিয়েছে। কি আর করা। নওয়াব তো আর নিজ হাতে জুতা পরতে পারেন না। প্রেস্টিজ বলতে তো একটা কথা আছে। বাধ্য হয়ে তিনি জুতার সারির দিকে চেয়ে বসেই থাকলেন।
রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করা হলো। নওয়াবের খাস কামরায় শত্রু সেনারা প্রবেশ করলো। তারা নওয়াবকে নিরুদ্বেগ অবস্থায় এভাবে বসে থাকতে দেখে তো অবাক! একজন জিজ্ঞাসা করলো, সবাই পালিয়ে গেছে, আপনিও তো পালাতে পারতেন। কেন আপনি পালাবার চেষ্টা না করে এভাবে বসে আছেন? নওয়াব সাহেব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, যে আমাকে সব সময় জুতা পরিয়ে দেয়, পা থেকে জুতা খুলে দেয়, সেই জুতার নফরকে অনেক ডাকাডাকি করলাম, কিন্তু পেলাম না, কখন যে পালিয়েছে তা জানি না। জুতা পরাবার লোক না থাকলে জুতা পরি কি ভাবে আর বিনা জুতায় পালাবোই বা কেমনে?
এক সৈনিক জিজ্ঞাসা করলেন, নিজের পায়ে নিজের জুতা পরবেন, এজন্য কি চাকর লাগে?
নওয়াব বললেন, আমি তো আর তুমি নই। আমি নওয়াব হয়ে নিজের হাতে জুতা পরতে পারি না। ইজ্জত কি সওয়াল।
শত্রুপক্ষের সেনানায়ক নওয়াবের এ কাহিনী শুনে বললেন, যদি এই নওয়াব জীবিত থাকেন তাহলে তাকে চিড়িয়াখানায় রাখা হোক। লোকজন তাকে দেখবে আর বলবে, ভারতবর্ষে এমন নওয়াবও ছিল, যে নিজের হাতে নিজের জুতা পরলে মনে করতো তাতে ইজ্জত থাকে না। তাই পালাতে পারেনি পাদুকা শূন্য পদযুগলের কারণে। যদি মারা যান তবে মমি করে রাখা হোক এই কাহিনীর নায়ককে যুগ যুগান্তরকাল পর্যন্ত স্মরণীয় করে রাখার জন্য। অতঃপর সেনানায়ক বললেন, ভারতবর্ষে এমন রাজা-মহারাজা আর নওয়াব আছেন বলেই তো সহজ বিজয় আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে।
বই: প্রেস্টিজ কনসার্নড